যে বয়স থেকে মেয়েদের ব্রা পরা উচিত
মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধির সাথে সাথে চলাফেরা, আচার আচরন পরিবর্তিত হতে থাকে। বয়ঃসন্ধিক্ষনের এ সময়ে তারা নিজেদের বিভিন্ন শারিরীক পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। সাধারণত স্কুল, শপিংমল, রাস্তাঘাটে এ বয়সের মেয়েদের দিকে অনেকেই শারীরিক অংগপ্রত্যঙ্গ এর দিকে দৃষ্টি দেন, আবার সমবয়সী কিছু মেয়েদের এ সময় থেকে ব্রা পরতে দেখেও অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েন তার ব্রা পরা উচিত কিনা। এ বয়সে মা বা অভিভাবক সমতুল্য কারও কাছে ব্রা নিয়ে কথা বলা মেয়েদের কাছে শুধু লজ্জার ই নয় অস্বস্তিকরও বটে। তাই মায়েদের উচিত হবে বয়োঃসন্ধিকালে এসব বিষয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলা, বন্ধুত্বসুলভ আচরন করা।সাধারনত আমাদের দেশের মেয়েদের ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই স্তনের বৃদ্ধি আরম্ভ হয়। স্তনের এ বৃদ্ধিকে থেলার্কি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ১২-১৩ বছরেই ব্রা পড়া উচিত কিনা? উত্তর হল না। স্তন স্বাভাবিক ভাবে যাতে বাড়তে পারে সে জন্য কয়েকবছর পর থেকে ব্রা পড়তে দেওয়া উচিত। সাধারণত মেয়েদের স্তন সাইজ ৩২ বা ৩২+ থেকে ব্রা পরার জন্য বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারনত নবম দশম শ্রেণী থেকে অনেক অভিভাবক ব্রা ব্যবহারের জন্য বলে থাকেন। তবে সব ক্ষেত্রে এমন টা করা উচিত নয়। সাধারণত স্তন ৩২ বা ৩২+ সাইজ হলে স্তন একটা নিদ্রিষ্ট শেপ সাইজে আসে প্রাকৃতিক ভাবে। এসময় ব্রা পরতে দেওয়া উচিত। এরপর স্তন ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ব্রা পরতে হয়।
প্রথম ব্রা কেনার আগে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত সঠিক সাইজ, শেইপ ও আরামদায়ক কাপড়ের তৈরি হওয়া আবশ্যক। প্রথমে স্তনের সঠিকভাবে মাপ নিতে হবে, কারন ব্রা সঠিক মাপের না হলে দু স্তনের আকার আকৃতি অসামঞ্জস্য হয়। ব্রা কেনার জন্য মায়েদেরকেই এসব বিষয়ে খেয়াল করতে হবে। সাধারণত স্পোর্টস ব্রা কেনা উত্তম, এগুলো সাধারণত সুতি কাপড়ের হয়ে থাকে। তাছাড়া ভাল আরামদায়ক কাপড়ের পুশ আআপ ব্রা হতে পারে প্রথম ব্রা। ক্লাস কিংবা বাসায় সবসময় এগুলো ব্যবহার করা যায়। এগুলোর কাপ, ব্যান্ড, স্ট্রাপ বেশ ভাল ভাবে স্তনকে আগলে রাখতে সক্ষম। খুব বেশি ডিজাইন করা ব্রা এ বয়সের জন্য না কেনা উত্তম। রংয়ের ক্ষেত্রে সাদা ও কালো পছন্দ করা যেতে পারে। তবে কালো রংয়ের ব্রা গরমকালে না পরা উত্তম, কারন এরা তাপ শোষণ করে। এতে স্তন ঘেমে স্তনে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বাভাবিক স্তন সাইজ ধরা হয় ৩৪-৩৬, স্তন সাইজ ৩৪-৩৬ হলে ব্রা চেঞ্জ করা যেতে পারে, এসময় পুশ আপ ব্রা কিংবা ডেমি কাপ ব্রা ব্যাবহার করা যেতে পারে। তবে স্তনের সাইজ ৩৮+ হলে ভাল মানের সাপোর্টিভ ব্রা পরতে হবে নইলে স্তন ঝুলে যাওয়ার পাশাপাশি শেপ নষ্ট হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, সাধারণ আটপৌরে ব্যবহারের জন্য প্যাডেড দেওয়া ফোমিং ব্রা ব্যবহার করা অনুচিত। এতে স্তনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যের অনুকরনে নয় সঠিক সময় জেনে ব্রা পরা উচিত। এসব বিষয়ে মেয়ের সাথে মা, বড় বোন কিংবা অভিভাবকদের বন্ধুত্বসুলভ আচরন কোমলমতী মেয়েদের নিজের প্রতি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
কিভাবে মাপবেন আপনার স্তন-এর সাইজ?
মজার বিষয় হলো অনেক মেয়েরাই নিজের মাপ জানেন না। ফলে সঠিক মাপের ব্রা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যান। নিচের পদ্ধতি অনুযায়ী ছবির সাথে মিলিয়ে নিজের সাইজ নিজেই বের করতে পারেন।
A. প্রথমে স্তনের ঠিক নিচেই আলতো ভাবে ফিতা ধরুন। ফিতা ও শরীরের মাঝে এক আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রেখে পুরো ঘেরের মাপ নিন। ৩০, ৩২, ৩৪, ৩৬, ৩৮ যাই হোক যদি আপনার মাপটি বেজোড় সংখ্যায় আসে তবে ৫ ইঞ্চি যোগ করুন, আর জোড়সংখ্যায় আসলে ৪ ইঞ্চি যোগ করুন। আর এটাই হবে আপনার প্রকৃত ব্যান্ড সাইজ। যেমন স্তনের নিচের মাপ পেলে ২৯ ইঞ্চি, তাহলে ৫ ইঞ্চি যোগ করুন=৩৪ ইঞ্চি। আর এই মাপ যদি ৩২ ইঞ্চি হয় তবে ৪ ইঞ্চি যোগ করুন= ৩৬ ইঞ্চি হবে আপনার ব্যান্ড সাইজ।
B. এবার স্তনের সর্বোচ্চ স্ফিত অংশে ফিতা ধরে মাপ নিন। এই মাপ থেকে সাইজ-এর মাপ বাদদিলেই আপনার কাপ সাইজ বেরিয়ে আসবে। যেমন আপনার সাইজ ৩৪, আর স্তনের মাপ এলো ৩৭। তাহলে আপনার ব্রার সাইজ ৩৪ সি। প্রতি ইঞ্চিতে এক সাইজ বেড়ে যায়। ১”= এ, ২” = বি, ৩”= সি. ৪”=ডি ইত্যাদি।
মনে রাখবেন স্তন সাইজ মাপার সময় মোটা কাপড়ের উপর থেকে কখনওই মাপ নেবেন না। এতে সঠিক মাপ পাবেন না।
সঠিক ব্রা বেছে নিতে মনে রাখুন ৯টি নিয়ম
১) ব্রা এর কাপের চাইতে ফিতার সাইজ কে গুরুত্ব দিন
ব্রা-এর কাপ সাইজের সাথে এর ফিতার সাইজের একটা সম্পর্ক আছে। তাই কোন ব্রা কেনার সময় ফিতার সাইজটাও দেখে নিন।
২) পিঠের হুক দেখে কিনুন
প্রায় সব ব্রা-তেই হুক লাগানো ফিতা থাকে। পেছনে সেই হুক লাগিয়েই ব্রা পরা হয়। ব্রা কেনার সময় দেখে নিন সেই হুক লাগানোর অনেক গুলো ঘর আছে কিনা। যে ব্রা গুলোতে হুক লাগানোর জন্য একাধিক ঘর আছে সেগুলো কেনাই ভালো।
৩) পেছনে চওড়া ফিতা
ব্রা কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিবেন পেছনের ফিতা বা বেল্ট যেন খুব বেশি চিকন না হয়। বিশেষ করে ওজন বেশি নারীরা চওড়া ফিতা দেখে ব্রা কিনুন।
৪) ব্রা তৈরির উপাদান
এটা একটা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। সিনথেটিক ব্রা নিয়মিত পরলে নানা রকম ত্বকের অসুখ হতে পারে। সাথে গরমের দিয়ে বাড়তি অস্বস্তি তো আছেই। নিয়মিত পরার জন্য সুতির ব্রা-ই ভালো।
৫) ফিতা টাইট দেখে নিন
ব্রা এর ফিতা খুব বেশি টেনে উঠিয়ে রাখবেন না। অনেকেই ব্রায়ের ফিতা টেনে উঠিয়ে পরেন যাতে ফিতা কাঁধ বেয়ে পড়ে না যায়। কিন্তু এই অভ্যাসের কারণে ব্রা এর ফিতা খুব তাড়াতাড়ি ঢিলে হয়ে যায়। ব্রা কেনার সময় একটু টাইট দেখে কিনুন।
৬। সমান্তরাল থাকা
ব্রার ‘কাপ’ এর উপরের অংশ বুকের সাথে সমান্তরালে থাকবে। ব্রা এবং শরীরের মধ্যে কোনও ফাঁক থাকবে না। আবার বেশি চেপেও থাকবে না যাতে শরীরের কোনও অংশ ফুলে থাকে। যদি এরকম হয় তবে অবশ্যই নতুন মাপের ব্রা পরিধান লরতে হবে।
৭। পেছনের ফিতা সোজা থাকা
ব্রার পেছনের ফিতা যদি সোজা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে ব্রার মাপ ঠিক নেই। অনেকসময়ই পেছনের ফিতা উপর দিকে উঠে আসে, এর মানে হচ্ছে মাপ ঠিক হয়নি। পেছনের ফিতা অবশ্যই পিঠের দুই চাকতির নীচে সমান্তরালভাবে থাকবে।
৮। ‘স্ট্র্যাপ’ কাঁধ থেকে খসে পরা
ব্রার বয়স যদি এক বছর বা তার বেশি হয়ে যায় তবে এই সমস্যা হতে পারে। তারমানে অন্তর্বাসেই রয়েছে সমস্যা। স্ট্র্যাপ পেছনের ফিতা থেকে সামনের কাপের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। আর ব্রা কে সঠিক জায়গায় থাকতে সাহায্য করে।
যেখানে সেখানে কাঁধ থেকে ব্রার ফিতা খসে পড়াও অস্বস্তিকর বিষয়। ঘাম ও শরীরের উত্তাপের কারণে ইলাস্টিকের কার্যকরিতা কমতে থাকে। যদি বেশ কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে নতুন ব্রা কিনুন এখনই।
৯। আকার ছোট বড়
ব্রা সঠিক আকারের পাশাপাশি সঠিক মাপেরও হতে হবে। তবে এটা শরীরের গঠনের উপর নির্ভর করে। অনেক মহিলারই একটি স্তন থেকে অন্য স্তন একটু ছোট বা বড় থাকে, বিশেষ করে ডান স্তনটি সাধারণত বাম স্তন থেকে বড় হয়। এরকম সমস্যা যাদের, প্রায়ই তাদের সঠিক মাপের ব্রা পেতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে ‘স্ট্রেচি কাপস’ বা টানলে বড় হয় আবার ছেড়ে দিলে আগের মত হয়ে যায় এরকম স্ট্রেচ-কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
আপনার অন্তর্বাস যেভাবে টিকবে বেশিদিন
আপনার অন্তর্বাস যেভাবে বেশিদিন টিকবে। অনেক সাধ করে প্রচুর টাকা খরচ করে অন্তর্বাস কিনলেন, কিনে যদি বেশিদিন পরতেই না পারলেন, তা হলে কী লাভ বলুন তো ! অন্তর্বাস প্রত্যেক নারীর নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সঙ্গী। আর অন্তর্বাস সবসময় একটু ভালো কোয়ালিটি ও দামি পরা উচিত। সস্তার অন্তর্বাস মোটেই সুস্বাস্থ্যকর নয়। তাই বেশিরভাগ নারীই নামীদামি ব্রান্ডের ব্রা বা অন্তর্বাস ব্যবহার করেন। কিন্তু অল্প কয়েকদিনেই যদি ব্রা নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে তো সমস্যা। অনেকদিন পর্যন্ত ব্রা ভালো রাখতে হলে, চাই ব্রা সঠিক যত্ন। ব্রা অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার যোগ্য করে রাখতে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখতে হবে, দেখে নিন একনজরে –
১) পিছনের হুক আগে লাগিয়ে তারপর ব্রা পরা অনেকেরই অভ্যাস । এমনটা একেবারেই করা উচিৎ নয় । এতে ব্রায়ের লেস আলগা হয়ে যায়। তাই প্রথমে ব্রা পরুন, তারপর পিছনের হুক লাগিয়ে নিন।
২) ব্রা পরার পর, ভালো করে অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া দরকার। তা না হলে ব্রা’র আকার বদলে যাবে।
৩) ব্রা কেনার সময় আয়নার সামনে একবার পরে দেখা ভালো। অনেক সময় বোঝা যায় না, শরীরের গড়ন অনুযায়ী সঠিক ব্রা কেনা হয়েছে কি না। নিজের শরীরের গড়ন অনুযায়ী সঠিক সাইজের ব্রা বেছে নিন।
৪) পোশাকের সঙ্গে সঠিক ব্রা পরাটাও জরুরি। হালকা রঙের পোশাকের নিচে সাদা বা ক্রিম কালারের ব্রা এবং গাঢ় রঙের পোশাকের সঙ্গে গাঢ় রঙের ব্রা বেছে নিন।
৫)অনেকদিন পর্যন্ত ব্রা ব্যবহারের যোগ্য রাখতে চাইলে দরকার সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করা। ব্রা অন্য কোনও পোশাকের সঙ্গে পরিষ্কার না করে আলাদা করে পরিষ্কার করুন। ওয়াশিং মেশিনের বদলে হাতে ধুলেই ভালো। তাতে ব্রা অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
৬) ব্রা পরিষ্কার করার জন্য হালকা ডিটারজেন্ট বেছে নিন। ব্লিচ না ব্যবহার করাই ভালো।
৭) বেশি রোদে কখনও ব্রা শুকোতে দেওয়া উচিত নয়। ছায়ায় বা হালকা রোদে শুকোতে দিন। ভিজে ব্রা শুকোতে আয়রনের ব্যবহার না করাই ভালো।
৮) ব্রা অনেকদিন পর্যন্ত ভালো রাখতে ভাঁজ করে রাখবেন না। আলমারির ড্রয়ারে বা র্যাকে স্বাভাবিকভাবে রেখে দিন।
No comments:
Post a Comment